জৈব সার বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আপনি কি জৈব সার বানানোর পদ্ধতি খুঁজছেন? এই আর্টিকেলটিতে জৈব সার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে সকল প্রকার জৈব সার, যেমনঃ গোবর সার, সবুজ সার, তরল জৈব সার ও ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ও স্বচ্ছ ধারণা লাভ করবেন।
শুধু সার বানানোর পদ্ধতিই না, এই আর্টিকেলটিতে সার বানানোর পর সংরক্ষণ এবং কোন ফসলের জন্য কোন জৈব সার উপযোগী এই বিষয়েও সঠিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

ভূমিকা

আমাদের দেশের অর্থনীতির বিশাল অংশ জুড়ে আছে কৃষি খাত। বেশি উৎপাদনের প্রতিযোগিতা থেকে বাড়ছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। এর ফলে ফসলের পরিমান তো বাড়ছে কিন্তু কমে যাচ্ছে ফসল ও জমির গুনগত মান। এই সমস্যা দুর করতে প্রয়োজন জৈব সার যা, জমির মাটির ভৌত গুনাগুন বজায় রাখবে সাথে উৎপাদন ও বাড়াবে।

কিন্তু জৈব সার বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে হিতে বিপরীত হতে পারে। জৈব সার বানানোর সময় জীবাণু ঠিকমতো নষ্ট না হলে পরবর্তীতে ফসলের ক্ষতি করতে পারে সাথে জমির উর্বরতা নষ্ট করতে পারে। আবার সঠিক অণুজীব সারের মাধ্যমে জীবিত করতে না পারলে জমিতে আগাছার পরিমান বেড়ে যেতে পারে।

এছাড়াও জৈব সারের বিভিন্ন ধরনের প্রকার রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ফসলের পুষ্টি চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কারণে পুষ্টি ভেদে সার নির্বাচন করা জরুরি। আর্টিকেলটি এমনভাবে সাজানো, যেন আপনি সহজেই জৈব সার বানানোর পদ্ধতি জানতে পারেন, সার সংরক্ষন করতে পারেন এবং সঠিক ফসলে সঠিক সার প্রয়গ করতে পারেন।

জৈব সার বানানোর পদ্ধতি

জৈব সার বানানোর পদ্ধতি জানতে হলে শুরুতেই জৈব সার কি এই বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। জীবন আছে এমন সবকিছু থেকে পাওয়া উপাদান দিয়ে তৈরি সার ই সাধারনত জৈব সার। যদিও কিছু রাসায়নিক উপাদানও জৈব সারের মতো আচরণ করে থাকে। প্রাণী থেকে পাওয়া উচ্ছিষ্ট এবং বিভিন্ন উদ্ভিদের অংশ জৈব সারের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। এই দুই মাধ্যম ছাড়াও কিছু জড় উপাদান ব্যবহার করা হয় সামান্য পরিমানে খনিজ চাহিদা পূরণ করার জন্য, যেমনঃ চুনাপাথরের স্তর, সবুজ বালি, পাথর কুঁচি ইত্যাদি।

এসব যাবতীয় উপাদানসমূহের আলাদা আলাদা গুন রয়েছে। যার কারণে জৈব সারের কিছু প্রকার তৈরি হয়েছে উপাদান ভেদে, যেমনঃ গোবর সার, সবুজ সার, তরল জৈব সার ও ভার্মি কম্পোস্ট সার। এই সবগুলো সার ই আলাদা আলাদা ভাবে জৈব সার হসেবে পরিচিত। পুষ্টি উপাদান ভেদে এসব সার নিজ গুনে অনন্য। চলুন তাহলে, জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন প্রকার জৈব সার বানানোর পদ্ধতি।

গোবর দিয়ে জৈব সার তৈরির পদ্ধতি

সকল প্রকার জৈব সারের মধ্যে গোবর দিয়ে তৈরি জৈব সারকে সবচেয়ে প্রচলিত ও উন্নত হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গোবর সার তৈরির সঠিক পদ্ধতি।

গোবর সার তৈরির জন্য প্রথমে আমাদের প্রয়োজন একটি উন্নত মানের গর্ত যেখানে গোবর সার প্রস্তুত করা হবে। ১ মিটার একটি গভীর গর্তের লম্বা ও চওড়া ২:১ অনুপাতে রাখতে হবে অর্থাৎ গর্তটি লম্বায় ৩ মিটার হলে, চওড়ায় ১.৫ মিটার হবে। গোবরের পরিমাণ বেশি হলে,গর্তে রাখার অনেক বড় না করে উল্লেখিত মাপ অনুযায়ী একাধিক গর্ত করতে হবে।

গর্ত খনন সম্পন্ন হলে,এর দেওয়ালে কাদামাটি অথবা পানিতে ঘন করে গুলে নেওয়া গোবর দিয়ে লেপে নিতে হবে। এরপর গোবর শুকিয়ে গেলে গর্তের নিচের অংশে চুনাপাথরের স্তর,পাথরকুচি,খড় বা সবুজ বালি (নদী বা সমুদ্রে পলি জমা বালি) দিয়ে একটি স্তর তৈরি করতে হবে। এরপর গর্ত তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে গোবর ফেলা শুরু করতে হবে।

গোবর বেশিদিন জমা থাকলে এখান থেকে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা বাতাসের সাথে মিশে উড়ে গেলে গোবর সারে যথাযথ পরিমাণ নাইট্রোজেন থাকবে না এতে সারের ভৌত গুনাগুন নষ্ট হবে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরিকৃত গর্তটিকে ৪ টি ভাগে ভাগ করুন।প্রতিটি ভাগ গোবর দ্বারা পরিপূর্ণ হওয়ার পর, পুকুরের তলদেশে জমে থাকা পচা, নরম কাঁদা গোবরের ওপর পাতলা করে বিছিয়ে দিন। এবার গোবর থেকে গ্যাস উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

গর্তটি পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর এর উপর একটি ছাউনি তৈরি করুন। ছাউনিটি খুব সহজেই বাঁশের ৪ টি খুঁটি ও খড় বা তাল পাতা দিয়ে তৈরি করা যায়। ছাউনিটি দেওয়ার কারণ হলো অতিরিক্ত বৃষ্টিতে গোবর ভিজে যাবে না এবং অতিরিক্ত রোদে গোবর অনেক শুকিয়ে যাবে না। এভাবে রেখে দেওয়ার ঠিক ৯০ দিন পর গর্তে থাকা সমস্ত গোবর উল্টে পাল্টে দিতে হবে।

এ অবস্থায় যদি দেখেন গোবর অনেক শুকিয়ে গিয়েছে, তাহলে গরুর মূত্র,খৈল ভেজানো পানি অথবা টিএসপি মিশ্রিত পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে পারেন। এই সবগুলো তরলই উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার হিসেবে আচরণ করে। প্রতি ১০০ কেজি সারের জন্য ২ কেজি টিএসপি ব্যাবহার করা উত্তম। আবার যথাযথভাবে ঢেকে দেওয়ার পর ৫০-৬০ দিনের মাথায় গোবর সম্পূর্ণ রূপে পঁচে গিয়ে উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার তৈরি হবে। এরপর জমিতে প্রয়োগ করলেই জমির মাটি ও ফসলের গুনাগুন বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত পরিবেশ বান্ধব এই জৈব সার।

ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতি

ভার্মিকম্পোস্ট সারের অতিপ্রচলিত আরেকটি নাম হচ্ছে কেচো কম্পোস্ট সার। কারণ এই সার বানানো হয় কেঁচোর মাধ্যমে। এই ভার্মি কম্পোস্ট সার বানানোর জন্য গোবর জৈব সারের মতোই গোবর প্রয়োজন তবে শর্ত হচ্ছে গোবর এক মাসের পুরনো পঁচা হতে হবে।চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক ভার্মি কম্পোস্ট সার বানানোর সঠিক পদ্ধতি।
  • ভার্মিকম্প পোস্ট সার বানানোর ক্ষেত্রে গর্ত করার থেকে মাটির উপরে দেয়াল বানিয়ে চৌবাচ্চা তৈরি বেশি কার্যকর। এক্ষেত্রে মাটি অথবা ইটের সাহায্যে ১ মিটার চওড়া ও লম্বা এবং ৩ সেন্টিমিটার গভীর চৌবাচ্চা বা নালা তৈরি করতে হবে।
  • এরপর ৩০ দিন ধরে পচানো গোবর দ্বারা চৌবাচ্চাটি পূর্ণ করতে হবে। একটি চৌবাচ্চাতে ৪০ কেজি গোবর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা উত্তম।
  • গোবর সার বানানোর পদ্ধতির মতো করেই নালা বা চৌবাচ্চাটির ওপর একটি ছাউনি তৈরি করতে হব।
  • এরপর গোবর গুলোর মধ্যে বেশি থেকে বেশি সংখ্যক কেঁচো ছেড়ে দিতে হবে। যত বেশি সংখ্যক কেঁচো গোবরের মধ্যে দেওয়া হবে,ততো দ্রুত সার তৈরি হবে। তবে একটি চৌবাচ্চার মধ্যে ১০০০ বড় মাপের কেঁচো ছাড়াই উত্তম।
  • আমাদের দেশে বর্তমানে ৫০০ এর বেশি প্রজাতির কেঁচো পাওয়া যায়। এর মধ্যে ভার্মি কম্পোস্ট সারের জন্য উপযুক্ত হলো ইউড্রিলাস ইউজেনি প্রজাতির কেঁচো। কারণ এদের সহ্য ক্ষমতা অন্য প্রজাতির তুলনায় অনেক বেশি।
  • ১০০০ টি কেঁচো ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে প্রায় ১০ কেজি মত ভার্মিকম্পোস্ট সার তৈরি করতে পারে।
  • কিছুগুলো গোবর খাওয়ার পর মলত্যাগ করবে। এই মলগুলোই মূলত কেঁচো কম্পোস্ট সার বা ভার্মি কম্পোস্ট সার।
  • এখন খুবই সাবধানতার সাথে কেচোঁগুলোকে নষ্ট না করে সারগুলো বাঁশের তৈরি চালনি দিয়ে চেলে আলাদা করে নিতে হবে।
  • সার থেকে কেঁচোগুলোকে আলাদা করার পর আবার আরেকটি স্তূপে ব্যবহার করা যাবে সার উৎপাদক হিসেবে।

সবুজ সার কিভাবে তৈরি করে

সবুজ সার নাম শুনে বোঝা যাচ্ছে, এই সার সবুজ গাছপালা থেকে তৈরি। সবুজ সার সাধারণত ধৈঞ্চা,  মটরশুঁটি, শন,সিম ইত্যাদি সবুজ গাছ থেকে তৈরি হয়ে থাক। আমাদের দেশে বেশিরভাগ ধৈঞ্চা এবং সন গাছ থেকে সবুজ সার তৈরি করা হয়।

ধৈঞ্চা গাছের মাধ্যমেঃ ধৈঞ্চা গাছ সাধারণভাবে অনেক ঘন হয়ে থাকে এবং এই কাজ পচতে একটু বেশি পানির প্রয়োজন হয়। তাই ধৈঞ্চা গাছ তুলনামূলক নিচু জমির জন্য সবুজ সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কারণ নিচু জমিতে সব সময় পানির পরিমাণ একটু বেশি থাকে। ১ শতক জমির জন্য ৩০০ গ্রাম পরিমাণ ধৈঞ্চা বীজ বপন করতে হবে।

এরপর ৫০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে গাছ পরিপক্ক হয়ে যাবে। ধৈঞ্চা গাছ যেহেতু অনুর্বর জমিতে ও খুব ভালো মত হয়,তাই আলাদাভাবে কোন সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু চাইলে সামান্য পরিমাণ টিএসপি ও পটাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। ধৈঞ্চা গাছ পরিপক্ক হওয়ার পর কাটার ব্যবস্থা করতে হবে।

কারণ ধৈঞ্চা গাছের কান্ড একটু শক্ত হওয়ায় চাষ করার সময় সমস্যা হতে পারে। কাটা সম্পন্ন হলে লাঙ্গল দিয়ে গাছগুলোকে উল্টিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে। এরপর জমিতে পানি দিয়ে এক সপ্তাহ পর পর দুই থেকে তিনটি করে চাষ করতে থাকতে হবে। এক মাসের মধ্যে দেখা যাবে গাছগুলো পচে মাটির সাথে মিশে গেছে। তখনই নিশ্চিত হওয়া যাবে সবুজ সার প্রস্তুত।

শন গাছের মাধ্যমেঃ ধৈঞ্চা গাছ দ্বারা তৈরি সবুজ সার আর সন গাছ দ্বারা তৈরি সবুজ স্যারের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু শন গাছ পচতে তুলনামূলক কম সময় এবং কম পানির প্রয়োজন হয়। তাই শন গাছকে উঁচু ও মাঝারি জমিতে সবুজ সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বেলে মাটিতে পানির পরিমাণ কম থাকার কারণে এখানেও সবুজ সার হিসেবে শন গাছ কে বেছে নেওয়া হয়।

শন গাছ লাগানোর ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। এই সময় লাঙ্গল দিয়ে কাজগুলোকে উল্টিয়ে মাটি চাপা দিতে হয়। এর পরবর্তীতে পানি দিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর চাষ করতে থাকলে কয়েক মাসের মধ্যে গাছ পচে সবুজ সারে পরিণত হবে।

তরল জৈব সার তৈরির নিয়ম

তরল জৈব সার মূলত বিভিন্ন জৈব সারের তরল বা পানীয় রুপ। জমি চাষের মাটি তৈরি করার পর বারবার শক্ত প্রকৃতির জৈব সার দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ফসল লাগানোর পর গাছকে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার অন্যতম উপায় তরল জৈব সার। এই সারকে পানির মাধ্যমে মিশিয়ে অল্প অল্প করে উদ্ভিদে পুষ্টি সরকার করা হয়।

সবচেয়ে বহুল প্রচলিত তরল জৈব সার গোবর এবং খৈল থেকে তৈরি করা হয়। তরল জৈব সার তৈরি করার জন্য সর্বপ্রথম যে কোন প্রাণীর বিষ্ঠা (গরুর গোবর সবচেয়ে ভালো) নিতে হবে। এর সমপরিমাণ করে সরিষার খৈল নিতে হবে। গোবর এবং খৈল এর ৫ গুণ পরিমাণ পানি একটি ড্রামে নিতে হবে। এরপর পানির মধ্যে খৈল এবং গোবর ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।

তরল জৈব সারের অতিরিক্ত উপাদান যুক্ত করার জন্য এর মধ্যে কলার খোসা, চায়ের পাতি অল্প পরিমাণে মেশাতে হবে। এভাবে ১০ থেকে ১৫ দিন রেখে দিতে হবে তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে তরল জৈব সার। সার প্রয়োগ করার সময় ২৫০ গ্রাম সার ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে গাছে প্রয়োগ করতে হবে।

জৈব সার সংরক্ষণের উপায়

সার তৈরির পর পরই যে জমিতে প্রয়োগ করার সময় হয়ে যাবে এমনটা নাও হতে পারে। তখন প্রয়োজন পড়বে সার সংরক্ষণ করার।চলুন জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন রকম জৈব সার সংরক্ষণ করার উপায়সমূহ।

গোবর সারঃ গোবরে নাইট্রোজেনের পরিমাণ ব্যাপক থাকে। সংরক্ষিত অবস্থায় না থাকলে নাইট্রোজেনের মাত্রা কমে যেতে পারে। তাই খেয়াল রাখতে হবে যেন গ্যাস উরে না যায়। বর্ষাকালে খেয়াল রাখতে হবে গোবর সারের জন্য তৈরি গর্তের মধ্যে যেন পানি না ঢুকতে পারে। গর্তের চারপাশ দিয়ে উঁচু করে আইল দিতে হবে।

অতিরিক্ত রোদের তাপে যেন সার শুকিয়ে না যায় তাই সারের গর্ত শীতল জায়গায় করা উচিত। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শাড়ির গুনাগুন নষ্ট করতে পারে। তাই খেয়াল রাখতে হবে ছাউনিটা ঠিক ঠাক ভাবে দেওয়া হয়েছে কিনা। এসব বিষয় খেয়াল রাখলে অনেকদিন যাবত গোবর সার সংরক্ষণ করা সম্ভব।

ভার্মি কম্পোস্ট সারঃ এই সার একটু শুকনো প্রকৃতির হওয়ার কারণে সহজে নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না। কিন্তু গুরুত্বহীন ভাবে ফেলে রাখলে নষ্ট হওয়া সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই এগুলো সংগ্রহ করার পর ছোট ছোট পাত্রে ভরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে তাহলে এই সারের এক বছরেও কোন সমস্যা হবে না।

সবুজ সারঃ সবুজ সার যেহেতু জমিতেই তৈরি করা হয় তাই এর ভৌত গুনাগুন নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু বেশিদিন রোদ বা বৃষ্টিতে জমি অযত্নে পড়ে থাকলে সারের কোন গুন অবশিষ্ট থাকবে না। জমিতে নিয়মিত পানি দেওয়া ও চাষ করার মাধ্যমে জমিকে উর্বর অবস্থায় রাখতে হবে, যেন বেশি শুকনা না হয়ে যায় বা বেশি কাঁদা অবস্থায় না।

তরল জৈব সারঃ এই সারের ক্ষেত্রে যেহেতু অনেক পচা বস্তু ড্রামে ভেজানো থাকে। তাই অনেকদিন ব্যবহার না করলে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে এবং সার নষ্ট হতে পারে। তাই সবসময় সাধের ড্রামকে নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে রাখতে হবে এবং গ্রামের মুখটি এমনভাবে রাখতে হবে যেন বাতাস এবং অক্সিজেন চলাচল করতে পারে।

সবচেয়ে ভালো জৈব সার কোনটি

প্রতিটি জৈব সারেরই আলাদা আলাদা গুণ রয়েছে। কিন্তু এসবের মাঝেও আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে কোন জৈব সার সবচেয়ে ভালো এবং কার্যকর।তাহলে চলুন আলোচনা করা যাক সকল জৈব সারের কার্যকর দিক সমূহ নিয়ে।

গোবর সারের সুবিধা ও অসুবিধা- এই সারে অনেক পরিমাণ নাইট্রোজেন থাকার কারণে এটি ফসলের জন্য এবং ফসলের জমির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য ব্যাপক কার্যকরী একটি জৈব সার। জমির পরিমাণ অনেক বেশি হলে জৈব সার হিসেবে গোবর সারের কোন বিকল্প নেই। এটি উৎপাদন যেমন সহজ তেমনি স্বল্প সময়ের মধ্যে অধিক উৎপাদন করা যায়। গোবরের ব্যবস্থা থাকলে এই সারর উৎপাদনে তেমন কোন খরচ নেই।

ভার্মি কম্পোস্ট সারের সুবিধা ও অসুবিধা-  আমরা জানি কেঁচোকে প্রাকৃতিক লাঙ্গল বলা হয়ে থাকে। কারণ কেঁচোর শরীরে এমন কিছু পদার্থ থাকে যেসব মাটির সাথে মিশলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। আর ভার্মি কম্পোস্ট সার যেহেতু কেঁচোর রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রণে তৈরি তাই এই সার জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যাপক সাহায্য করে। এই সার সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও অনেক সহজ। একটু শুকনো প্রকৃতির হওয়ায় অনেকদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়। কিন্তু এর একটি অসুবিধা হলো, এই সার উৎপাদন করতে উন্নত জাতের কেঁচো প্রয়োজন এবং তৈরি হতে সময় তুলনামূলক বেশি লাগে।

সবুজ সারের সুবিধা ও অসুবিধা- সবুজ সার একটি আদর্শ সার হিসেবে পরিচয় পেতে পারে। এই সারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি জমিতেই তৈরি করা হয়। সবুজ গাছপালা থেকে তৈরি হয় এই সার যার কারণে ফসলে পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত হয় এবং অক্সিজেন চলাচল স্বাভাবিক থাকে। এই সারের একটি সমস্যা হলো অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার এবং বারবার চাষ করে মাটির সঙ্গে মেশাতে হয়, যা তুলনামূলক খরচ ও সময় সাপেক্ষ। আবার মাটির নিচে গাছ ভালোভাবে না পচলে পরবর্তীতে ফসলের ক্ষতি হতে পারে।

তরল জৈব সারের সুবিধা ও অসুবিধা- শক্ত জৈব সারগুলো বারবার ফসলে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। ফসলের পুষ্টি অভাব দেখা দিলে বারবার পানির সাথে তরল জৈব সার মিশিয়ে প্রয়োগ করা যায়। এটা অন্য কোন জৈব সার দিয়ে করা সম্ভব হয় না। কিন্তু এই মাধ্যমের বড় একটি প্রতিবন্ধকতা হল অধিক পরিমাণ ফসলি জমি হলে এই সার প্রয়োগ করার সময় সাপেক্ষ এবং বেশি কার্যকর না।

সম্পূর্ণ আলোচনার সারমর্ম থেকে বলা যায় যে, সকল প্রকার জৈবসারই নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে অনন্য। কিন্তু সবগুলোর মধ্যে তৈরি পদ্ধতি, গুনাগু, সংরক্ষণ সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করলে সঠিক পদ্ধতিতে তৈরি গোবর সার সবচেয়ে উত্তম।

লেখকের মন্তব্য

আমরা সকলেই জানি রাসায়নিক সার ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু জৈব সারও যে ক্ষতিকর হতে পারে এই সম্পর্কে আমরা বেশিরভাগই ধারণা রাখি না। জৈব সার বানানো তুলনামূলক বেশি সময় সাপেক্ষ বেপার এবং অভিজ্ঞ কারো তত্ত্বাবধায়নে যেহেতু এই সার তৈরি করা হয় না তাই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। জৈব সার ঠিক ভাবে প্রস্তুত না হলে জমিতে প্রয়গের পর আগাছা জন্মানো, মাটির উর্বরতা নষ্ট হওয়া সহ নানান সমস্যা হতে পারে। তাই পরিবেশ বাঁচাতে এবং জৈব সারের উত্তম কার্যকারিতা পেতে জৈব সার বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা অত্যাবশ্যক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url