ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন

আপনি কি জানেন ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম? আপনার যদি ওজন বেশি থাকে তাহলে আর্টিকেলে দেখানো নিয়মে গ্রিন টি পান ই হতে পারে আপনার ওজন কমানোর সবচেয়ে দ্রুত কার্যকারী উপায়।পুরো আর্টিকেল পড়লে এই বিষয়ে পরিষ্কার একটি ধারনা পেয়ে যাবেন।

শুধু ওজন কমানোর বিষয় জানলেই কি চলবে?ওজন কমানো ছাড়াও আরও অনেক গুন রয়েছে গ্রিন টির। আর্টিকেলটিতে গ্রিন টির অন্যান্য উপকারসহ ব্যাবহারের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া হয়েছে।

ভূমিকা

আমাদের দেশে ছোট বড় সকলের মাঝে চা এতোই জনপ্রিয় যে,বর্তমানে এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে কাজের মধ্যকার বিরতি বা সকলের আড্ডা চা ছাড়া যেন চলেই না।আমাদের দেশে চা খাওয়ার মানুষের ভিন্নতার সাথে সাথে চায়েরও বিভিন্ন ধরন রয়েছে। সকল প্রকার চায়ের মধ্যে গ্রিন টি, এমন এক ধরনের চা যার কোনো ক্ষতিকর দিক নেই।গ্রিন টি আমাদের শরীরের বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রতিকার ও করে থাকে। চলুন গ্রিন টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

গ্রিন টি খেলে কি হয়

গ্রিন টি কি দ্বারা তৈরি সেটি জানলে,এটি খেলে কি হয় সেটা সম্পর্কে স্বচ্ছ একটি ধারণা পাওয়া যাবে। গ্রিন টি মূলত চা গাছ বা ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস এর সবচেয়ে কোমল অংশ বা কুঁড়ি থেকে তৈরি। এই কুড়িঁ শুধু যে চা তৈরিতে ব্যবহার হয় এমনটা না।আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি হাঁপানি সহ রক্ত সঞ্চালন সম্বন্ধীয় জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। যেহেতু আগেই বলেছি গ্রিন টির কোন ক্ষতিকর দিক নেই,তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক গ্রিন টি খেলে শরীরের কি কি উপকার হতে পারে-

স্ট্রোক থেকে মুক্তিঃ আমাদের শরীরে অক্সিডেন্ট এর প্রভাবে অক্সিডেন্টিভ স্ট্রেচ তৈরি করে। এর প্রভাবে আমাদের শরীরের শিরা উপশিরা শক্ত আকার ধারণ করে এবং হাইপারটেনশন তৈরি করে,যা পরবর্তীতে স্ট্রোকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গ্রীন টি তে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে শিরা-উপশিরা শিথিল করে হাইপারটেনশন থেকে মুক্তি দেয়।

হৃদপিন্ডের সুস্থতাঃ রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃদপিণ্ড তার স্বাভাবিকতা হারায় এর ফলে বিভিন্ন প্রকার হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গ্রিন টি রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী।

হাঁপানি থেকে মুক্তিঃ গ্রিন টি তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল এলার্জি এবং ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন ভাইরাস এর বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকারী।তাই হাঁপানি হলে গ্রিন টি হতে পারে প্রতিশেধক।

চুল ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বর্ধনঃ আমরা জানি ভিটামিন সি ত্বকের কোষগুলো সতেজ রাখতে এবং উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।আবার ভিটামিন ই চুলের গোড়ার শক্তি এবং চুলের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।গ্রিন টিতে ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি এর তুলনায় অধিক শক্তিশালী উপাদান ক্যাটেচিন বিদ্যমান,যা চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বর্ধনের সাহায্য করে।

ওজন হ্রাসঃ গ্রিন টি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি দূর করে ওজন কমাতে সাহায্য করে ।

ক্যান্সার থেকে রক্ষাঃ শরীরের বিভিন্ন অস্বাভাবিকতার কারণে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টি হতে পারে নিয়মিত গ্রিন টি খেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রভাবে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হয়।

শরীরের শক্তি বর্ধনঃ গ্রিন টি তে রয়েছে সেলোনিয়াম,ক্রোমিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ সহ আরো উপাদান যা শরীরের ইমিউনো সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম

আমরা অনেকেই গ্রিন টি খেয়ে থাকি কিন্তু ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানি না।ওজন কমাতে হলে প্রথমে এর কারন সম্পর্কে সঠিক ধারনা রাখতে হবে।শরীরের ওজন বাড়ার কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত চর্বি, তাই ওজন কমাতে হলে চর্বির জারণ অত্যাবশ্যক। গ্রিন টির মধ্যে থাকা পলিফেনল চর্বি জারনে অত্যন্ত কার্যকারী। এছাড়াও এটি শরীরের অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত জায়গার কোষগুলোতে শর্করা প্রবেশে বাধা দেয়। আবার আমরা যে খাবারগুলো খাই সেগুলো সমানভাবে বিপাক না হওয়ার কারণে এক জায়গাতে জমা হয় এবং শরীরে স্থূলতার সৃষ্টি করে। তাই শরীরের বিপাকক্রিয়া বাড়ানোর জন্য গ্রিন টি ভারী খাবার খাওয়ার অন্ততপক্ষে দুই ঘণ্টা পর খাওয়া সাচ্চে উত্তম।এই চায়ের থাকা ক্যাফিন নামক উপাদান বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।

গ্রিন টি তে কি চিনি মিশিয়ে খেতে হয়

গ্রিন টির অনেক অনেক উপকারের মধ্যে অন্যতম হলো ওজন কমানো।ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম মানা জরুরি যার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো চিনি।আমরা পূর্বেই জেনে এসেছি ওজন কমানোর অন্যতম পূর্ব শর্ত হলো চর্বির জারণ। চর্বির জারণ এবং স্থূলতা কমানোর জন্য অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত কোষ গুলোতে শর্করার প্রবেশ আটকানো প্রয়োজন। আর চিনি হল শর্করার অন্যতম বাহক এবং শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত। তাই সর্বদাই মনে রাখতে হবে গ্রিন টির সাথে কোন প্রকার চিনি মিশিয়ে খাওয়া যাবেনা। গ্রিন টির সাথে চিনি মেশালে এর ভৌত গুনাগুন নষ্ট হয় এবং শরীরের কোন কাজে আসে না।

গ্রিন টি তৈরির নিয়ম

আমরা অনেকেই গ্রিন টি বানানোর সঠিক নিয়ম জানি না। যার ফলে রং চা বানানোর মতো করেই গ্রিন টি তৈরি করে থাকি। এভাবে বানালে গ্রিন টি এর ভৌত গুনাগুন নষ্ট হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক গ্রিন টি বানানোর সঠিক নিয়ম -

এক কাপ পরিমাণ চা বানানোর জন্য একটি কাপ পানি এবং ১ চামচ পরিমাণ গ্রিন টি এর গুঁড়া প্রয়োজন হবে। প্রথমে একটি পাত্রে পানি বসিয়ে গরম করতে হবে, পানি ভালোমতো ফুটে গেলে নামিয়ে একটু ঠান্ডা করে নিতে হবে, যেন কুসুম গরম অবস্থায় থাকে(৩৭°সেলসিয়াস তাপমাত্রার কাছাকাছি বা একটু বেশি)। এই অবস্থায় এক কাপ পরিমাণ চা পাতি বা গুঁড়া পানিতে দিয়ে দিতে হবে।এ অবস্থায় চা সহ পানিকে ২-৩ মিনিট ঢেকে রাখতে হবে। তাহলে প্রস্তুত হয়ে যাবে কাঙ্ক্ষিত গ্রিন টি।

গ্রিন টি কখন খাওয়া উচিত নয়

কথায় আছে ভুল সময়ে খাওয়া মধুও বিষ হতে পারে।তেমনি গ্রিন টি সময় বুঝে না খেলে উপকারের থেকে বেশি ক্ষতি হতে পারে।আমাদের মধ্যে অনেকেরই অভ্যাস রয়েছে সকালে চা খাওয়ার মাধ্যমে দিন শুরু করা যা একদমই উচিত নয়। একদম খালি পেটে গ্রিন টি খেলে পেটে এসিডিও পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আবার একইভাবে খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই গ্রিন টি খাওয়া উচিত নয়।

গ্রিন টি যেহেতু বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত করে তাই খাওয়ার পরপরই গ্রিনটি খেলে এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ হতে পারে। গ্রিন টি তে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফিন থাকে যা শরীরের কোষগুলোকে জাগ্রত রাখতে সাহায্য করে তাই রোজ ঘুমাতে যাওয়ার আগে গ্রিন টি খেলে অনিদ্রার সমস্যা হতে পারে। তাই আমরা দিনটির সর্বোচ্চ উপকার পেতে সঠিক সময়ে এটি পান করব।

গ্রিন টি কখন খাওয়া উচিত

কোন কিছু থেকে তার সর্বোচ্চ উপকার পেতে হলে, অবশ্যই সেটি সঠিক সময়ে ব্যবহার করা প্রয়োজন।ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম ও সময়সূচী গ্রিন টি খাওয়ার আদর্শ সময় হল দুই ভারী খাবার খাওয়ার সময়ের মাঝামাঝি। অর্থাৎ বিকেলে গ্রিন টি খাওয়া সবচেয়ে বেশি উত্তম, কারণ আমরা দুপুরে একবার ভারী খাবার খাই এবং রাতে একবার ভারী খাবার খাই।

দুপুর এবং রাতের এই মাঝামাঝি সময় আমাদের শরীর সবকিছু গ্রহণের আদর্শ অবস্থায় থাকে। সব সময় বিকেলে না খাওয়া গেলেও চেষ্টা করতে হবে যেকোনো ভারী খাবার খাওয়ার অন্তত ২ ঘন্টা পর গ্রিন টি খেতে হবে। তাহলে শরীরের বিপাকক্রিয়া সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে এবং গ্রিন টির সকল উপাদান শরীরের উপকারে কাজে আসবে।

গ্রিন টির অন্যতম প্রধান কাজ যেহেতু ওজন কমানো তাই নিয়মিত ব্যায়াম করার পর গ্রিন টি খাওয়া উচিত।কিন্তু মনে রাখতে হবে ব্যায়াম শেষে ক্লান্ত অবস্থায় সাথে সাথেই গ্রিন টি খাওয়া যাবেনা। এভাবে সঠিক সময় বুঝে নিয়মিত গ্রিন টি পান করে আমরা সবাই উপকৃত হতে পারব।

লেখকের মন্তব্য

গ্রিন টি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি একটি পানীয় হওয়ার সত্তেও আমরা এটি সম্পর্কে অনেক উদাসীন। স্বাদের নেশাই পড়ে আমরা অনেকেই লিকার চা বা দুধ চা এ আসক্ত যা আমাদের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।চায়ের স্বাদ গ্রহনের সাথে সাথে সুস্থ থাকতে হলে আমাদের উচিত রোজ ৩ থেকে ৪ কাপ পরিমান চা পান করা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url