বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়

জন্ডিস একটি রোগের উপসর্গ হওয়ার পরেও মৃত্যুর কারন হতে পারে কি?জন্ডিস সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকার কারনে যদি আমরা ভুল কোনো পদক্ষেপ নিয়ে ফেলি তাহলে শেষ পরিনতি হিসেবে মৃত্যু হতে পারে। আর্টিকেল টি পুরো পড়লে জন্ডিস সম্পর্কে আর কোন সন্দেহের অবকাশ থাকবে না।
জন্ডিস হওয়ার কারণ এবং প্রতিকার,প্রতিরোধ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা থাকলে এই উপসর্গ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।জন্ডিস সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জানতে সম্পূর্ণ পড়ুন।

ভূমিকা

জন্ডিস কোন রোগ না হয়েই যেকোনো রোগের থেকে বেশি আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাড়ায় কারণ এই বিষয়ে আমাদের বেশিরভাগেরই সঠিক ধারণা নেই। জন্ডিস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পানিবাহিত।আর আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকজন নিরাপদ পানি খাওয়া সম্পর্কে সচেতন না। তাই ঘরে ঘরে এই সমস্যার প্রকপ বেড়েই চলেছে। জন্ডিস ঘিরে অনেক কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে,যার প্রভাব স্বরূপ যকৃত বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই জন্ডিস এর সঠিক কারন,প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা আবসসক।চলুন তথ্যপূর্ণ আলচনার মাধ্যমে জন্ডিস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

জন্ডিস হয়েছে কিভাবে বুঝবো

আমাদের দেশের অনেকের মধ্যে ভুল ধারনা রয়েছে জন্ডিস নিয়ে। জন্ডিস কোনো রোগ না ,এটা অনেকেই মানতে নারাজ। কিন্তু বাস্তবে জন্ডিস যকৃতের রোগের একটি উপসর্গ মাত্র। যকৃতের অস্বাভাবিকতার কারনে রক্তে বিরিলুবিনের ঘনত্ব বেড়ে যায়। আর বিরিলুবিনের রং হলুদ হওয়ার কারনে সহজেই জন্ডিসের আবির্ভাবের প্রমান পাওয়া যায়।

স্বাভাবিক ভাবেই চোখের রং হলুদ হয়, প্রস্রাব হলুদ রং এর হয়, শরীরের বিভিন্ন জায়গার ত্বক হলুদ বর্ণ ধারন করে। এ সকল উপসর্গ দেখা দিলে বুঝতে হবে জন্ডিস হতে পারে। কিন্তু এসব ছাড়াও বমি হওয়া, জ্বর-জ্বর ভাব, শরীর ব্যথা ইত্যাদি লক্ষন দেখা দিলে হেপাটাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।তাই এসব লক্ষন দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তার এর পরামর্শ নিয়ে সঠিকভাবে পরিক্ষা করানোর মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে।

বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়

অনেকেই সাধারন লক্ষন দেখলেই নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিক্ষা করান কিন্তু বিরিলুবিন এর সঠিক মাত্রা জানা না থাকার কারনে বুঝতে পারেন না। স্বাভাবিক অবস্থায় বিরিলুবিন এর ঘনত্ব রক্তে 1.2 mg/dL এর নিচে থাকে।এর থেকে বিরিলুবিন এর ঘনত্ব একটু বেড়ে গেলে অনেকেই মনে করেন জন্ডিস হয়েছে কিন্তু এমন টা না।রক্তে বিরিলুবিন এর ঘনত্ব 1.2 mg/dL এর থেকে বেশি কিন্তু 3mg/dL এর থেকে কম হলে জন্ডিস হয়েছে বলা যাবে না। রক্তে বিরিলুবিন এর ঘনত্ব 3mg/dL এর ওপর গেলে তবেই জন্ডিস হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়

জন্ডিস যেহেতু বিরিলুবিন বাড়ার একটি ফল,তাই এর প্রভাবে নানান সমস্যার দেখা দিতে পারে।চলুন জেনে নেওয়া যাক জন্ডিস এর সময় হওয়া কিছু সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত-

  • বিরিলুবিন এর ঘনত্ব বাড়ার কারনে পিত্ত রস পাকস্থলিতে পৌছাতে পারে না।প্রভাব স্বরূপ পরিপাক ক্রিয়া ঠিকভাবে কাজ করে না।ফলে মলের রং সাদা হয়ে যায় এবং পেট ব্যথা সহ বমি বমি ভাব হয়।
  • বিরিলুবিন বিষাক্ত পদার্থ এর প্রভাবে খাদ্যনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। আর এর ফলে কোনো খাবার খাওয়া যায় না।
  • জন্ডিস হলে শরীর এতো পরিমানে দুর্বল হয় যে একটু চলাচল করলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে রুগী এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।
  • যকৃত এ প্রদাহ বেড়ে গেলে মুখে দুর্গন্ধ হয়ে থাকে।
  • বিরিলুবিন রক্তের উপাদান হওয়ায় কিডনীতে জমা হয় এবং ঘনত্ব অনেক বেশি হওয়ায় সম্পূর্ণ বের হতে পারে না।কিডনী তে জমা থাকার কারনে প্রদাহ তৈরি করে ফলে কোমরে ব্যথাসহ কিডনী জনিত নানান সমস্যা দেখা দেয়।
  • এক প্রকার জন্ডিস আছে বিরিলুবিন শরীরে ত্বকের সাথে লেগে যায়।এই অবস্থা রুগীর জন্য অনেক ভয়াবহ হয়। সারা শরীর অসম্ভব চুলকাতে থাকে।

লিভার জন্ডিস হলে কি হয়

লিভার জন্ডিস মূলত সাধারন জন্ডিস এর ই আলাদা এক নাম। মানুষের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে অনেক ভুল ধারনা আছে।অনেকে মনে করে সাধারন জন্ডিসে হলুদ পদার্থ কিডনিতে ও মাথায় জমা হয়ে থাকে যার কারনে চোখ ও প্রস্রাব হলুদ হয়। পরবর্তীতে তা লিভারে গিয়ে লিভার জন্ডিসে পরিনিত হয়। কিন্তু ধারনাটির কোনও ভিত্তি নাই। জন্ডিস মূলত তৈরি ই হয় লিভার থেকে কারন বিরিলুবিন তৈরি হয় যকৃত বা লিভার থেকে।

জন্ডিস হলে কি খেতে হয়

জন্ডিস হলে স্বাভাবিক ভাবেই খাদ্যনালীতে প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। তাই খাবার অনেক সাবধানে খাওয়া উচিত এই সময়।এমন কোনো খাবার খাওয়া যাবে না যাতে যকৃত এর ওপর চাপ পড়ে।তাজা শাক- সবজি খাওয়ার পরিমান বাড়াতে হবে।সহজপাচ্য ও যকৃত এর জন্য উপকারি কিছু শাক-সবজি হলো- পেপে, গাজর, শালগম, টমেটো, মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টিআলু, ব্রোকলি, ফুলকপি, পালংশাক, আদা, রসুন ইত্যাদি।

জন্ডিস হলে কি খাওয়া যাবে না

জন্ডিস হলে শরীর এর অবস্থা এতই নাজুক থাকে যে বর্জিত খাবারের তালিকা অনেক লম্বা।যকৃত এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে এমন কোনো খাবার খাওয়া যাবে না।
  • তেল চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কারন এসব খাবার হজম করার জন্য বেশি পিত্তরসের প্রয়োজন অর্থাৎ যকৃতের ওপর চাপ পরবে অনেক।
  • নেশা জাতীয় পদার্থ পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে কারন এসব যকৃতের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে।জন্ডিসের সময় এসব নেশা দ্রব্য যকৃত বিকল করে দিতে পারে।
  • আখের রস যকৃতের জন্য ভালো কিন্তু আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে জন্ডিস হলে সুধু অনেক অনেক আখের রস খেলেই ভালো হয়ে যাবে।যদিও আখের রস খেলেই জন্ডিস ভালো হয়ে যায় তার কোনো সত্যতা নাই বরং বেশি আখের রস খাওয়ার ফলে সুগার বেড়ে গেলে রুগির অবস্থা খারাপ হতে পারে।
  • ফাইবার জাতীয় খাবার শরীরের জন্য ভালো হলেও জন্ডিস এর সময় এসব খাবার হজম করতে যকৃতের ওপর অনেক চাপ পড়ে। তাই এই জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
  • জাঙ্কফুড স্বাভাবিক সময়েই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। জন্ডিস এর সময় এসব খাবার খেলে যকৃতের চাপের কারনে বিরিলুবিন এর পরিমান বেড়ে জেতে পারে।
  • পানি জন্ডিসে আক্রান্ত বেক্তিদের অনেক বড় প্রশ্নের জায়গা কারন জন্ডিস একটি পানিবাহিত রোগ।অসাস্থকর পরিবেশে কখনো পানি পান করা উচিত না একজন জন্ডিসে আক্রান্ত রুগীর।
  • লাল রং এর মাংস (যেমনঃ গরুর মাংস,মহিষের মাংস ইত্যাদি) হজমে অনেক শক্তি প্রয়োজন হয়।তাই এসব খাবার একদম ই খাওয়া যাবে না।
  • গাছ থেকে তৈরি ঔষধ আমাদের সমাজে অনেক প্রচলিত পদ্ধতি জন্ডিসের চিকিৎসার জন্ন।কিন্তু এসব ঔষধ কোনো নিয়ম বা পরিমান হিসেব করে বানানো হয় না তাই এসব খেলে যকৃতের ওপর খারাপ পরতে পারে।এসব না খেয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ খেতে হবে।

জন্ডিস হলে কি মানুষ মারা যায়

জন্ডিস কোনো রোগ না হলেও এটি যকৃতের রোগের একটি উপসর্গ যার প্রভাব অনেক বেশি। জন্ডিসের জন্য সৃষ্টি হওয়া বিরিলুবিন অনেক খতিকর।এটি যকৃতের প্রদাহ বাড়াতে থাকে নিয়মিত। সঠিক চিকিৎসা না করা হলে আস্তে আস্তে যকৃত অকেজো হয়ে মানুষ মারা যেতে পারে। তাই জন্ডিসের লক্ষন দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করে চিকিৎসার আয়তায় আসা প্রয়জন।

লেখকের মন্তব্য

ইতোমধ্যেই আমরা জন্ডিস এর ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত হয়েছি।কিন্তু সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি সহজেই নিরাময় করা সম্ভব তাই জন্ডিস হলে ভয় না পেয়ে সঠিক উপায়ে নিরাময় এর চেষ্টা করতে হবে। জন্ডিস হলে কোনো কবিরাজ এর কাছে না গিয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করতে হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী জীবন-যাপন করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url